• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

সারা দেশ

গোড়ার মসজিদে শুক্রবার হলেই মান্নতের ঢল নামছে

  • ''
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২৪

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

মানত শব্দের সঙ্গে সব ধর্মের অনুসারীরাই কম-বেশি পরিচিত। মানতের বিষয়ে সব ধর্মের অনুসারীরা একমত পোষণ করলেও মানতের ক্ষেত্র নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। মানত কোথায় করবে, মানত কীভাবে করবে, মানতের যৌক্তিকতা কি এবং আদৌ মানতের বৈধতা আছে কিনা ইত্যাদি।সাধারণত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষে কোনো কিছু উৎসর্গ করাকে মানত বলা হয়। অনেকে তাদের আশা পুরনেরে জন্য গরু,ছাগল, মুরগিসহ বিভিন্ন মান্নত করে থাকেন।

ছাগলের দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল গফুর বিশ্বাস নামে এক ব্যাক্তি। রোগ বালাই নিবারনের মান্নত পরিশোধ করতে আসছে শতশত মানুষ। যশোরের নাভারণ শহর থেকে এসছেন গফুর বিশ^াস। ছাগলটি মসজিদে ‘মানত’ পরিশোধ করবেন এ কারণে এনেছেন কালীগঞ্জের গোড়ার মসজিদে। তিনি বলেন,আমার মনের একটি আশা ছিল সেটি পুরণ হওয়ায় আল্লহর ওয়াস্তে ঐতিহ্যবাহী এই গোড়ার মসজিদে ছাগলটি নিয়ত পরিশোধ করতে এসেছি। মসজিদের প্রাচীর ঘেষা দানবাক্সের সামনে মুরগি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন রহিমা বেগম(৩৩) ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলা থেকে এসেছেন। বিয়ের দীর্ঘ ৯ বছর পর তিনি মা হয়েছেন কোলে ছোট্ট সেই বাচ্চাটি রয়েছে।

এই মসজিদে মানত করেছিলেন, সন্তানের মুখ দেখতে পেলে মসজিদটিতে এসে একটি মুরগি দেবেন,সেই ওয়াদা পূরণে এসেছেন। বড় বড় হাড়িতে রান্না করা খাবার নিয়ে পুরো পরিবারের লোকজন সাথে নিয়ে গোড়ার মসজিদে এসেছেন তিন সন্তানের জননী নুসরাত জাহান কোলে রয়েছে একমাত্র কন্যা সন্তান। দুই ছেলের পরে মেয়ে হলে গোড়ার মসজিদের ইমামকে দিয়ে মুখে ভাত দেবেন এবং মুসল্লিদের খাওয়াবেন।শুধু রহিমা বেগম, আবদুল গফুর বিশ্বাস কিংবা নুসরাত জাহান নয়; এমন অনেক মানুষ এই মসজিদে তাদের মান্নত ও দান করতে আসেন। দূর-দূরান্ত থেকে এই মসজিদে আসা বেশির ভাগ মানুষই জানিয়েছেন, আল্লাহ তাদের মনোবাসনা পূরণ করেছেন এই মসজিদের মাধ্যমে।

মানতের ছাগল,মুরগি,গরু,নগদ টাকা কোথায় যায়-তা তার বলতে পারেন না কেউই। গোড়ার মসজিদটি অন্যতম একটি মসজিদ হিসেবে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। যে কারণে এই মসজিদটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সমাগম ঘটে। মসজিদটিতে আসা মানুষের বিশ্বাস এখানে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হবে। মানুষের এই মনের বিশ্বাসের সূত্রপাত ঘটে বহুবছর আগ থেকে।

প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের দিন মসজিদে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে। মসজিদটিতে পবিত্র জুম্মা সালাত প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫ শত লোক একসাথে আদায় করেন। মসজিদটি ছোট হওয়ায় আশপাশ এলাকাতে পাটি বিছিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করতে করতে হয় মুসল্লিদের। জুম্মার নামাজের দিনে মানুষ পানির বোতল,তেলের বোতল,জীবন্ত মুরগী,ছাগল এবং রান্না করা খাবার নিয়ে হাজির হন মসজিদ প্রাঙ্গনে। অনেকে তাদের সন্তানের মুখে ভাত দেন এই মসজিদের ইমাম সাহেবকে দিয়ে। মসজিদে আগত সকলেই মুক্ত হস্তে দান করেন। কয়েকটি কাঠের তৈরি ছোট দান বাক্স নামাজ শেষে কাতারে কাতারে পাঠানো হয়। মুসল্লিরা বাক্সে নগদ টাকা দান করেন।

মসজিদের পূর্ব পাশে দুইটি বড় মুরগির খাঁচা তৈরি করা রয়েছে। মানুষ তাদের মানতের মুরগি ওই খাঁচাতে রাখেন। এই খাঁচার সামনে মসজিদ পরিচালনা কমিটির দুই একজন সদস্য সব সময় অবস্থান করে এসব দেখভাল করেন। জুম্মার দিন মানতের মুরগি ছাগল ও নগদ অর্থ সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় হয়। গোড়ার মসজিদটি ৩ বছর মেয়াদী ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই মসজিদে মানুষের দান, সদকা ও মানতের টাকা যৌথ নামে দুইটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। মসজিদটিতে বেতনভুক্ত একজন খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন।

প্রতন্ততাত্বিক নিদর্শনসমূহ করার জন্য প্রত্নতত্বক অধিদপ্তর খুলনা অফিস কর্তৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত সাইট পরিচালক পদে থাকা গোলাম মোস্তফা জানান, আমি দীর্ঘদিন এসব সমূহ দেখাশোনা করছি। এই গোড়ার মসজিদ সম্পর্কে মানুষের মনে অন্যরকম একটি বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। যে কারণে মানুষ এখানে আসছে,নামাজ আদায় করছে এবং মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার মানত করে তাও দিয়ে যাচ্ছে।

মাত্র ৩ শতক জমির উপরে সুলতানি আমলের এই গোড়ার মসজিদে বর্তমানে মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। এখানে মুক্ত হস্তে দান, সদকা ও মানত দিচ্ছেন। এসব টাকা মসজিদের উন্নয়নের পাশাপাশি এই মসজিদের নামে গড়ে তোলা একটি মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। বর্তমানে গোড়ার মসজিদ কমিটির ফান্ডে নাকি প্রায ৩০ লক্ষ টাকা রয়েছে। কালীগঞ্জ সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক এনামুল হক জানান, মসজিদে মানত কোনভাবেই গ্রহন যোগ্য নয়,এটা এক ধরনের ব্যাবসা ও মানত সম্পূর্ণ মানুষের মনগড়া।“বিশ্বাসে মিলায় বস্তুুু, তর্কে বহুদূর” এই তত্বের উপর মানুষ মানত চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামি শরিয়া মোতাবেক দান সাদকা করার নির্দেশনা রয়েছে। কালীগঞ্জ ইমাম পরিষদের সভাপতি মুফতি মাহমুদুল হাসান বলেন, মসজিদ কেন্দ্রিক মানত করা জায়েজ নয়। ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বৈধ ও হালাল যে কোন কিছুই আল্লাহর জন্য হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads